পেকুয়া প্রতিনিধি :::
পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। এসময় তার বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুরও করেছে সন্ত্রাসীরা।
শনিবার (১৩জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা ইউনুছ চেয়ারম্যানের বাড়ীতে হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের মারধর করে তাকে কালারপাড়া এলাকার নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে বেধড়ক পিটেয়ে চোখ তুলে নেওয়ায় চেষ্টা চালায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ মুজিবুর রহমান বলেন, আহতের অবস্থা গুরুতর। তার মাথা, চোখ সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত রয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ইউনুছ চেয়ারম্যানের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, সকাল থেকে সন্ত্রাসীরা আমাদের বসতবাড়ি লক্ষ করে গুলিবর্ষণ অব্যাহত রাখে। এসময় স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা চেয়েও আমরা পাইনি। পরে সন্ধ্যায় মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের নেতৃত্বে কালার পাড়া এলাকার কানা মানিক, পশ্চিম কূল এলাকার জিয়াবুল, কাজী মার্কেট এলাকার আব্দুল করিম, লিটন, আফজলীয়া পাড়া এলাকার কায়সার ও জয়নাল সহ অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী বাড়ীতে হামলা চালায়। এসময় তারা ব্যাপক ভাংচুর চালিয়ে গুলিবর্ষণ করতে করতে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতা আমার স্বামীকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করি।
মগনামা ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সুলতান মোঃ রিপন বলেন, চলতি মৌসুমের শুরুতে সাবমেরিন স্টেশনের জন্য অধিগ্রহণ করা সরকারী জমি লবণ চাষের জন্য অবৈধ দখল নেয় মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম। জমির বিনিময়ে প্রান্তিক লবণ চাষীদের কাছ থেকে তিনি অর্থ আদায় করতে থাকেন।
কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য ও পেকুয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁসানো মামলায় দীর্ঘ দশমাস কারাভোগ করার পর শুক্রবার (১২জানুয়ারি) বিশাল গণ সংবর্ধনার মাধ্যমে এলাকায় ফিরেন আওয়ামীলীগ নেতা ইউনুছ চেয়ারম্যান। তার ফিরে আসাতে প্রাণসঞ্চার হয় অত্যাচারিত জনসাধারণের। প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে চাষীরা। বন্ধ করে দেয় চেয়ারম্যান ওয়াসিমকে অনৈতিক চাঁদা প্রদান। আর এতেই ফুঁসে উঠে ওয়াসিমের সশস্ত্র বাহিনী। তাই পরিকল্পিতভাবে তার উপর এ হামলা চালানো হয়।
পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, পূর্ব শত্রুতা এবং এস.আলম গ্রুপের জমির দখল সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। ইউনুছ চেয়ারম্যানের উপর হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এসময় দুপক্ষের মধ্যে প্রচন্ড গোলাগুলি হওয়ায় এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ইউনুছের অবস্থা গুরুতর বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পেকুয়া থানা পুলিশ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। উত্তেজিত প্রশমিত করতে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান সুসংহত করে দক্ষিন মগনামায়।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আজ ১৩ জানুয়ারী শনিবার সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত গোলাগুলি চলছিল। বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের পক্ষের লোকজন ও লবণ চাষীরা মগনামা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরীর কাঁকপাড়া কুতুবদিয়া চ্যানেল সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাড়ি ঘেরাও করছে বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।
পেকুয়া থানা পুলিশ সকাল থেকে সারাদিন দক্ষিন মগনামায় অবস্থান নেয়। পেকুয়া থানার এস, আই কিশোর সত্যতা স্বীকার করেছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানায়, সন্ধ্যার দিকে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত ওসিসহ সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌছে।
স্থানীয়রা জানায়, সোনালী কার্গো লি: চট্রগ্রাম এর মালিকানাধীন উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়ায় প্রায় ২শ একর জমি আছে। গত কয়েক বছর ধরে এস,আলমের সাথে ইউনুছের বিরোধ চলছিল। চলতি বছরে এস, আলম ওই জমি শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমকে লাগিয়ত করে। অপরদিকে ইউনুছ চৌধুরীকে উচ্ছেদ করতে গত ৭ মাস আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়। স্থানীয়রা জানায়, বর্তমান চেয়ারম্যান তাকে ইয়াবা ও অস্ত্র দিয়ে জেলে পৌছায়। গত ১৫ দিন আগে ইউনুছ কারাগার থেকে বের হন। এ সময় তিনি জাপা থেকে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগে যোগ দেন। গত ১২ জানুয়ারী ইউনুছ বিশাল শোডাউনসহ মগনামায় পৌছায়। এ সময় মগনামা হাই স্কুল মাঠে এক বিশাল গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের জেলা পর্যায়ের কিছু নেতৃত্ব তার সভায় উপস্থিত হয়ে তার প্রতি সমর্থন জানায়। লবণ চাষী আক্তার আলম, মনু মাঝি, আসহাব উদ্দিন জানায়, ইউনুছ চেয়ারম্যানের লোকজন দুটি সেচ পাম্প ও লবণ মাঠের পলিথিনসহ সরঞ্জামাদি নিয়ে যায়।
পেকুয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান জানান, সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছকে মারধর করা হয়েছে। তাকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
পাঠকের মতামত: